ফিরে দেখি মহান মে দিবস-১৮৮৬

রানা চৌধুরী: শ্রমিক বিশ্বের সোনার খণি,শ্রমিকরাই হোক সবার নয়ন মণি। এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ‘‘ফিরে দেখি সেই মহান মে, দিবসের শুরুটা যেখানে,সেই-১৮৮৬’’। আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস যা সাধারনত বা সচরাচর মহান মে দিবস নামে অভিহিত। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম তারিখে
সারা পৃথিবীব্যাপী উদযাপিত হয় এ দিনটি । এটিই মূলত আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিন বা মহান মে দিবস। পৃথিবীর নানান দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সু-সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ দিবসটি পালন করে থাকেন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। এছাড়াও আরো অনেক দেশে এটি বেসরকারীভাবে পালিত হয়।
ইতিহাস:১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয় এই মহান মে দিবস। সেদিন দৈনিক-৮ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের উপর এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।
১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়এবং এর পরপরই ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে।
পরে, ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দে আমষ্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক -৮ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না-থাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখ কে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট এবং কিছু কট্টর পন্থী সংগঠন তাদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোনো কোনো স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে।
মূলত পূর্বতন সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস এটা একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সে সব দেশে এমনকি এ উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজেরও আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে।
আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিনটি পালনের বিশেষ উদ্যোক্তা। হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে কোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে আর সে জন্য ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।
শ্রমিকরা দেয় শ্রম বিলিয়ে,মলিকরা চলে তাই গাড়ী হাকিয়ে।শ্রমিকের ঘামের মূল্য, পৃথিবীতে নেই কিছু তার সমতুল্য।দেশে দেশে যে শ্রমিকরা সোনা ফলায়,সেই শ্রমিকরাই আবার নির্যাতন সয়ে অনাহারে দিন কাটায়।যদি বিশ্বে করতে চাই সুখী সমৃদ্ধ ও উন্নয়ন তবে শ্রমিকদের করতে হবে যথাযথ মূল্যায়ন। যাদের জন্য মালিকরা আজ সোনায় সোহাগা-পৃথিবীতে আজ তারাই বড়ই হতভাগা।