জয়পুরহাটে সমলয়ে ধান চাষ প্রকল্পে ছয়-নয় লোকসানের মুখে কৃষক

মোঃ আবু মুসা জয়পুরহাট: কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জয়পুরহাটে রবি মৌসুমে জমিতে ব্লক প্রদর্শনীর মাধ্যমে হাইব্রিট বোরো ধান সমলয়ে চাষাবাদ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির ও ছয়-নয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই প্রকল্পে কৃষকদের সব রকম সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও নামমাত্র খরচ দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রকল্পের সুফলভোগী ৬৭ জন কৃষককে নিজের টাকায় সেচ কাজ, পরিচর্যা, মাড়াই করতে হয়েছে। অথচ প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ বপন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ধানের চারা রোপন, বালাইনাশক, সার ও কম্বাইন হারভেষ্টার দিয়ে ধান মাড়াই ও ঝাড়াই করে ভরে তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু কৃষি বিভাগ কিছুই করেনি। সুবিধাভোগী কৃষকদের বোরো উৎপাদনে কোন খরচ লাগবে না। শুধু তাঁরা তাঁদের জমির উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলবে এমনটিই কথা ছিল, হয়েছে তার উল্টোটা।
যানা যায় কৃষি বিভাগ জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমি-কোমরগ্রাম ফসলি মাঠের ৫০ একর জমিতে এই প্রকল্প হাতে নেয়। ৬৭ জন কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী। কৃষি মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পে ১৪ লাখ সতেরো হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। ১০-১৫ জন সুফলভোগী কৃষক জানান, প্রকল্পে ৫০ একর জমির কথা বলা হলেও বাস্তবে ১৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ জিরাশাইল ও কাটারিভোগ জাতের ধান চাষ করলে ভালো দাম পেতেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের লোকজন তাঁদের হাইব্রিড জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। এতে যাবতীয় খরচ দেওয়ার কথা থাকলেও নামমাত্র খরচ দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে। হাইব্রিড ধান চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছি।
কোমরগ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, সমলয়ে চার বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান রোপন করেছি। চার বিঘার জমির জন্য ১৩০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭৫ কেজি পটাশ, ৭৫ কেজি ফসফেট ,৪০ কেজি জিপসাম, চার কেজি জিং, দশ কেজি বীজ ও কীটনাশক পেয়েছি। বাজারে ১৩০ কেজি ইউরিয়ার দাম ২০৮০ টাকা, ৭৫ কেজি পটাশের দাম ১১২৫ টাকা, ৭৫ কেজি ফসফেটের দাম ১৫০০ টাকা, ৪০ জেজি জিপসারের দাম ৭৫০ টাকা, চার কেজি জিংয়ের দাম ৮৮০ টাকা, দশ কেজি বীজের দাম ১০০০ টাকা। চার বিঘা জমিতে এখন পর্যন্ত নামমাত্র সহায়তা পেয়েছি। বাকি খরচের টাকা পায়নি নিজের টাকায় করেছি। কম্বাইন হারভেষ্টার দিয়ে ধান মাড়াই ও ঝাড়াই করে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কিছুই করেনি। তিনি বলেন, যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই পরিমাণ টাকা খরচ করেনি। ৫০ একর জমিতে সমলয়ে চাষাবাদের কথা বলা হলেও ৭ একর জমি কম রয়েছে। অথচ সেগুলোরও খরচ দেখানো হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স,ম মেফতাহুল বারি বলেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলার একটি মাঠে দেড়শ বিঘা জমিতে সমলয়ে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। ধানচাষের জমিপ্রস্তুত থেকে মাড়াই-ঝাড়াই পর্যন্ত সকল খরচ কৃষি অফিসের দেওয়ার কথা। তবে এ প্রকল্পে যদি কোন প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে তা তদন্ত করে প প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।