‘মুনিয়া’ মামলার আসামি আনভীর হঠাৎ জনসমক্ষে

Desk Reporter
Desk Reporter
প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২১

নিউজ ডেস্ক: বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘ ৩৩ দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পর হঠাৎ করেই জনসমক্ষে এসেছেন। রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) রহস্যজনক মৃত্যুর পর গা ঢাকা দেয়া মামলার প্রধান আসামি তিনি।

শনিবার কুড়িল বিশ্বরোড সংলগ্ন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে তাকে দেখা গেল। গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।

মুনিয়া ‘হত্যার’ পর দীর্ঘদিনেও বসুন্ধরা এমডিকে গ্রেফতার না করায় ও একটি চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ, হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান।

তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা মোসারাত জাহান মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে করছি। এ মামলার প্রধান আসামি ও মুনিয়ার ঘাতক প্রেমিক বসুন্ধরা এমডিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এমন একজন আসামির প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেআইনি। ফলে জনগণের কাছে এমন বার্তা যাচ্ছে- ক্ষমতাশালী ও বিত্তবানরা যেন আইনের ঊর্ধ্বে। অথচ আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান হওয়ার কথা। মুনিয়া ‘হত্যাকাণ্ডে’ তার প্রেমিক আনভীরকে গ্রেফতার না করে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাত্র তিনদিন আগেও তার গ্রেফতারের দাবিতে আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পুলিশ কমকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তারা শুধু বলছেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্তসহ ফরেনসিক প্রতিবেদন পাইনি। তবে থেমে নেই তদন্ত।

তবে আরেকটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দুই সন্তানের জনক আনভীরের পরকীয়াকাণ্ডে প্রেমিকা মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও শেষ রক্ষা নাও হতে পারে। এখনো তিনি গ্রেফতার না হলেও গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো সময় আনভীরকে গ্রেফতার করা হবে। কারণ মুনিয়া-আনভীরের গভীর প্রেম ও পরবর্র্তীতে বিয়ে না করে এক পর্যায়ে ওই তরুণীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার বিষয়টি মামলার তদন্তে উঠে এসেছে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ তারা পেয়েছেন।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনকালে বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে ছাইরঙা টুপি, কালো সানগ্লাস, কালো মাস্ক, কালো টি-শার্ট ও গাঢ় নীল প্যান্ট পরিহিত বসা অবস্থায় দেখা গেছে। এর খবর একাধিক গণমাধ্যমের অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে।

গুলশানের ফ্ল্যাটে কলেজছাত্রী মুনিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ মামলায় একমাত্র অভিযুক্ত আসামি এই আনভীর। ঘটনার পর তিনি দেশ আছেন নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন, এ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ঘটনার রাতেই কার্গো বিমানে করে দেশ ছেড়েছেন বসুন্ধরা এমডি।

তবে তার অবস্থান সম্পর্কে ওই সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী দাবি করেন, আনভীরের দেশত্যাগের বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসামি (আনভীর) বাংলাদেশে আছেন। তিনি দুটি (বাংলাদেশ ও স্লোভাকিয়া) পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।

তবে মুনিয়ার মৃত্যুর পর তিনদিনের মাথায় গত ২৯ এপ্রিল রাতে চার্টার্ড ফ্লাইটে (ভাড়া করা বিমান) দেশ ছাড়েন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকের পরিবারের আট সদস্য। এ তালিকায় ছিলেন সায়েম সোবহান আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, তাদের দুই সন্তান, ছোট ভাই সাফওয়ান সোবহানের স্ত্রী ইয়াশা সোবহান ও তাদের মেয়ে ও দুই পরিবারের তিনজন গৃহকর্মী ডায়ানা হার্নানডেজ চাকানান্দো, মোহাম্মদ কাদের মীর ও হোসনে আরা খাতুন। এর আগের ২৭ এপ্রিল আনভীরের ছোট ভাই সাফওয়ান সোবহানও দেশ ছাড়েন।

আর বসুন্ধরা এমডি আনভীর নিজে ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় গত ২৭ এপ্রিল তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। পরবর্তীতে আগাম জামিনের আবেদন করেন আনভীরের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তবে সেই জামিন শুনানি স্থগিত করেন আদালত।

অন্যদিকে আলোচিত এই মামলায় আনভীরকে গ্রেফতারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচি পালন করে অনেকগুলো সামাজিক সংগঠন। সবশেষ গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা কলেজছাত্রী মুনিয়াকে হত্যা মামলার আসামি আনভীরকে অবিলম্বে গ্রেফতারসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সাধারণত কোনো এজাহার হলেই পুলিশ সচেষ্ট হয়ে অভিযোগকৃত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়। এমনকি অভিযোগকারীকে না পেলে তার বাবা-মা, স্ত্রী, পরিবারের সদস্যদের কিংবা সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু মুনিয়া হত্যা মামলার ক্ষেত্রে প্রধান আসামি আনভীর প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মনে সংশয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে, যা আমরাও প্রত্যক্ষ করছি। আমরা কি বুঝে নেব, প্রশাসন তাদের হাতে জিম্মি ?

প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়া। আনভীরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। প্রতিমাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে আনভীর মুনিয়াকে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতো বসুন্ধরা এমডি। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো।

মুনিয়ার বোন অভিযোগ করেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল। একটি ছবি ফেসবুকে দেয়াকে কেন্দ্র করে আনভীর তার বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ফলে মুনিয়াকে হত্যা করা হতে পারে।