পবিত্র পরিচ্ছন্নতায় অন্যতম শহীদ মিনার

আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জঃ মায়ের ভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার ৫২-এর রক্ত ঝড়া বিশ্ব কাপানো আন্দোলনের সফলতায় গর্ব করে বলছি আমরী বাংলা ভাষা। অথচ একটি বিশেষ দিনেই কেবল সেই মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত ‘শহীদ মিনার’ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়ে থাকে। এরপর সারা বছর পবিত্র স্থানটি থাকে অবহেলায় অরক্ষিত এবং অপরিচ্ছন্ন।
দেশের অধিকাংশ শহীদ মিনারের যখন এমন অবস্থা, তখন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুরে নির্মিত শহীদ মিনারটি একে বারেই ব্যতিক্রম। একটি গণমাধ্যমের সাধারন কর্মী স্বপন মির্জার এই শহীদ মিনারটি একেবারে দৃষ্টিনন্দন ও পরিচ্ছন্ন। এলাকার সকলকে ভাল কাজে উৎসাহিত ও মানবিক কল্যানে কাজ করা স্বপন মির্জা সহ গ্রামবাসী এর পবিত্রতা রক্ষা করেন পরম মমতায়। তাই শহীদ মিনারটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দুর থেকে দেখতে এসে এর পরিচ্ছন্নতায় সকলেই অবাক হন।
এছাড়া শহীদ মিনারের সাথে গড়া হয়েছে অনন্য সৌন্দর্য্যের একটি বাগান। শহীদ মিনার তথা এই বাগান ঘিরে রাতভর গাছে-গাছে শোভাপায় নানার রংগের ফানুস বাতি। এদিকে এ শহীদ মিনার দেখভালের জন্য রয়েছে আলাদা রক্ষনা-বেক্ষন কমিটি। তাদের তত্বাবধানে শহীদ মিনারটি প্রতিদিন ২ বার ঝাড়– দেয়া থেকে শুরু করে সপ্তাহে অন্তত ৩ বার পানি দিয়ে ধৌত করা হয়। ফুলের সমারহ ঘেরা শহীদ মিনারটি এখন পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে অন্য গুলোর জন্য হতে পারে অনুকরণীয়।
স্বপন মির্জা পেশায় একজন সাধারন সংবাদ কর্মী। ২০০২ সালে সাংবাদিকতা শুরুর পর টেলিভিশন ও পত্রিকায় তার প্রকাশিত সংবাদ আলোচিত হয়েছে দেশ-বিদেশে। এজন্য সেরা প্রতিবেদক হিসেবে জাতীয় ও স্থানীয় ভাবে পুরস্কার পেয়েছেন অনেকবার।
এদিকে সমাজ কর্মী স্বপন মির্জার অন্যতম উদ্যোগ হলো গোপিনাথপুর গ্রামে শহীদ মিনার নির্মান। ২১ ফেব্রুয়ারী এলেই বঁাশ ও কলাগাছের ক্ষনিকের শহীদ মিনারই শহীদদের স্মরণে ভরসা ছিল এলাকার মানুষের। ২০১৩ সালে এখানে ফুল দিতে গিয়ে সবাই তার কাছে দাবী করে বললেন, একটি শহীদ মিনার নির্মানের। স্বামর্থ না থাকলেও ভাল কাজে হা বলতে পারা স্বপন মির্জা স্বীকার করে ফেলেন। পরে ২০১৪ সালের জুনের দিকে থাকার ঘর করার জন্য গচ্ছিত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন এ কাজ।
এরপর বিষয়টি জানতে পেরে একুশে ফোরাম সিরাজগঞ্জের সভাপতি ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামান তালুকদার তার হাতে তুলে দেন ৩০ হাজার টাকা, ঢাকার বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না ৫ হাজার, এলাকার ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন দেন ১৫ হাজার টাকা। আরো কিছু টাকা যোগ করে তিনি প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মান করেন স্বপ্নের শহীদ মিনার। যা এলাকার কৃতি সন্তান ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের পুরোধা ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের উদ্ধোধনের কথা ছিল। কিন্তু ৪ অক্টোবর হঠাৎ তার মৃত্যু হলে ঐ বছরের ১৭ ডিসেম্বর ভাষা মতিনের স্ত্রী গুলবদন নেছা মনিকা সহ স্থানীয় ২ জন সাংসদ এ শহীদ মিনারটি উদ্ধোধন করেন।
এসএস পাইপের মিনার ও মুল্যবান টাইলস্ দিয়ে বেদী মোড়ানো কাঠামোর শহীদ মিনারটি দেশের মধ্যে আসলেই অনন্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। ১২ ফুট প্রস্থ ও ১৪ ফুট লম্বা এ শহীদ মিনারটি ছোট হলেও এর অনন্য স্থাপত্য শৈলী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
রাতেও আলোকিত রাখতে শহীদ মিনার ও তার আশপাশ ঘিরে আম, বট, মেহগনি, কড়ই গাছ সহ বাগানে ১৯টি নানান রংগের ফানুস ও বাতি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের আলো সাড়ারাত আলোকিত রাখে পুরো শহীদ মিনার, বাগান তথা আশপাশ।
নানা আলোর এমন দৃশ্য সারা বছর দেশের আর কোন গ্রামে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। এ সবই স্বপন মির্জার উদ্যোগে স্থাপিত শোভা পেয়েছে।
এদিকে সাড়া দেশেই শহীদ মিনার রয়েছে। তবে পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন তেমন থাকেনা। এমন ধারনা থেকে শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় গঠন করা হয়েছে এখানে একটি কমিটি।
‘গোপিনাথপুর শহীদ মিনার রক্ষনা বেক্ষন কমিটি’ নামে স্কুল-কলেজের ছাত্র, তঁাত শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দপ্তরী সহ ১১ সদস্য বিশিষ্ট এ সংগঠনের সভাপতি স্বপন মির্জা ও কাপড় ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন সাধারন সম্পাদক। যাদের নিবেদিত দেখভালে সাড়া বছর পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্য থাকে পবিত্র মিনারটি।