ক্যানসারের কথা বলে ৪৬ লক্ষ টাকা অনুদান!

ওয়েব ডেস্ক: নিকোল এলকাবাস।৪২ বছর বয়সী এই মহিলার ওভারিয়ান ক্যানসার হয়েছিল।বাড়িতে সন্তানরা রয়েছে। আর মারণ রোগে আক্রান্ত তিনি। চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত টাকাও নেই। যাকে বলা যায়, নির্মম আর অসহায় পরিস্থিতি।
প্রাণ বাঁচাতে GoFundMe-তে একটি ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেইন শুরু করেন তিনি। লোকজনের কাছে নিজের অসহায় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সাহায্যের আবেদন জানান। নিকোলের কাতর আবেদনে এগিয়ে আসেন মানুষজন।
কয়েকমাসের মধ্যে প্রায় ৫২,০০০ পাউন্ড টাকা ওঠে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকার কাছাকাছি! কিন্তু আদতে এই অসহায়তার আড়ালে এক আলাদা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন ওই মহিলা। সত্যিটা হল, তাঁর ক্যানসার হয়নি।
জানা যাচ্ছে, এই টাকা দিয়ে দিনের পর দিন ফূর্তি করেছেন তিনি। বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছেন। জুয়া খেলেছেন। ফুটবল ম্যাচের টিকিট কিনেছেন। না, এ কোনও সিনেমার গল্প নয়। এটাই সত্যি! ঘটনাটা জানাজানি হতেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই মহিলাকে।
Daily Mail-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই নিয়ে বিশদে বর্ণণা করা হয়েছে। আদালতে মামলা ওঠার পর নিকোলকে দু’বছর নয় মাসের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনার সূত্রপাত বছর দুয়েক আগে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত এভাবেই টাকা তুলেছিলেন নিকোল। অনুদানের অর্থ দিয়েই একের পর এক নানা মূল্যবান জিনিস কিনেছেন।
আইনজীবীর কথায়, চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়ার নামে সাধারণ মানুষের সুযোগ নিয়েছেন নিকোল। তাঁদের দেওয়া অর্থের অপব্যবহার করেছেন। যা ভয়ঙ্কর অপরাধ!
এই বিষয়ে বিচারপতি মার্ক উইকস জানিয়েছেন, মানুষজনকে বোকা বানিয়ে টাকা তুলেছেন এলকাবাস। চিকিৎসার জন্য টাকা তুলে ইতালি, স্পেন-সহ একাধিক জায়গায় জুয়া খেলে বেড়িয়েছেন। এদিক-ওদিক ঘুরতে গিয়েছেন। শপিং করেছেন। এই ধরনের ঘটনা মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে। এতে সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হয়। এর জেরে ভবিষ্যতে কোনও আর্থিক অনুদান দিতে গেলে, মানুষজন পিছিয়ে যাবেন। চ্যারিটেবল ট্রাস্টগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। তাই এই ধরনের অপরাধকে কড়া হাতে দমন করা উচিত।
মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘Nicole needs our help treatment’ নামে একটি ফান্ড রেইজিং পেজও খুলেছিলেন এলকাবাস। লোকজনকে জানিয়েছিলেন, এই পেজটি তাঁর মা খুলেছেন। মেয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা তুলতে চান। ওই পেজ থেকে জানা যায়, ক্যানসার আক্রান্ত নিকোলের না কি ১১ বছরের এক সন্তান রয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনটি অপারেশন ও ছয় বার কেমোথেরাপি হয়েছে।
কিন্তু চিকিৎসার পাহাড়প্রমাণ খরচ বহন করা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। তাই এই সাহায্যের আবেদন। আসলে টাকা তোলার জন্য বিশদে রিসার্চ করেছিলেন নিকোল। সেই জন্য তাঁর মিথ্যগুলিও সত্যির মতো মনে হয়েছিল। পেইজে একাধিক পোস্ট করা হত। কেমো দেওয়ার পর রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন, সে নিয়েও নানা ধরনের আবেগপ্রবণ তথ্য দেওয়া হত। এডিটিং টুল কাজে লাগিয়ে নিজের ছোট্ট ছেলের সঙ্গেও ছবি পোস্ট করতেন নিকোল। আর এই ষড়যন্ত্রের আড়ালে ধীরে ধীরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভরতে থাকে নিকোলের। তবে শেষমেশ নিকোলের অপরাধজাল ফাঁস হয়ে গেল।
সূত্র: news18